Thikkabita9

Thursday, November 21, 2024

ঠিক কবিতা ৯: পিন্টু ঘোষ

 


পি ন্টু ঘো ষ


বটগাছ




' সুদিন আসবে ' ভেবে প্রতিবার মাঠে

বেদনার বীজ ছড়ায় বাবা

কিন্তু প্রত্যেকবারই

                   সোনার ফসল আসে

                      বিষাদ বাষ্প আসে

সুদিন আসে না


বাবা আসলে বটগাছের মতো

দুঃখ সহ্য করে ঝুড়ি নামিয়েছে কেবল, নড়েনি এক পা-ও




___________


*(কবিতাটির প্রথম প্রকাশ 2019 সালে লালমাটি পত্রিকায়)


————

রোদ   

মেয়েটির দু'গালে হাত রেখে ঠাকুমা বলছিল, তোর জন্যই এত মায়া, শাখায় শাখায় মুকুলে পল্লবে বিস্ফারণ, চাতকের কাতর প্রার্থনা, ঋতুতে বর্ষা-বসন্তের আগমন। তোর জন্যই পুরুষের বুক আজও পাষাণ, দূর্বার মতো নারীও কোমল। তোর জন্যই বেঁচে আছে কোমল গান্ধার ; রাঙা পলাশ ...

আগুন রঙা শাড়ি পরা মেয়েটা একমনে ঠাকুমার কথাগুলো শুনছিল, ভাবছিল ঠাকুমাও হয়তো কবিতা লেখে।

আমি জানি ঠাকুমা কবিতা লেখে না ; আমি জানি ঠাকুমা অসম্ভব সত্যি কথা বলে, জিরাফকে বলে জিরাফ, প্রজাপতিকে প্রজাপতি। আর এটাও জানি যে, ঠাকুমার দেওয়া ডাকনাম কখনও  ভুল হতে পারে না।

আমরা সবাই এখন রোদের সাথে গল্প করছি। রোদ, মেয়েটির ডাকনাম।


__________________________________________


*(কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল 2018 সালে শব্দের মিছিল এ)


অনলাইনে সংগ্রহ করুন  》 Buy


সূচিপত্র

পুস্তক আলোচনা: কুয়াশা কুয়াশা কথা

 


✍️রবীন বসু



কবি ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য-এর কবিতার বই “কুয়াশা কুয়াশা কথা” গতকাল যাদবপুর কফিহাউসে হাতে পেলাম। শোভন সুন্দর ঝকঝকে একটি কাব্যগ্রন্থ। নামকরণেই মুগ্ধ হয়েছি প্রথমে। তারপর রুচিশীল প্রচ্ছদ নজর কেড়েছে। “কুয়াশা কুয়াশা কথা” কবির এক ভাসমান বোধ ও জীবন দর্শনের কবিতাগুচ্ছ। আপাত সরল নিরাভরণ দেহের কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে এক অনাবার্য টান ও বিস্ময়। সে বিস্ময় শুধু পাঠকের না, কবির নিজেরও বোধহয়।


“কিছু দেখেও দেখতে পাচ্ছি না 


কিছু শুনেও শুনতে পাচ্ছি না 


কিছু লিখেও লিখতে পারছি না।”


                        ( পরমক্ষণিক )


আমরা এক অনিকেত শূন্যতায় ঝুলছি। সময় নির্মম ভাবে প্রতিশোধ নেয়, আর এটাই আধুনিক যুগ-যন্ত্রণা। কবি সেই যন্ত্রণার শিকার। সেই অবরুদ্ধ দিনের প্রতীকি ভাষা। 


“যেন সূর্যের মধ্য আকাশ 


যেন সব হারানো এক ভেকধারী ফকির 


তাই অসফলের দরজায় কড়া নাড়ি।”


                          ( অসফল আলো )


সে অর্থে এই যুগটাই অসফল। জীবন যেন না -পাওয়ার, স্বপ্নহীনতার এক খসে পড়া পালক। কবি কিন্তু যত্নে সেই পালক কুড়িয়ে বুক পকেটে রাখেন। কেননা, এটা তাঁর স্মৃতি। তাঁর বসবাস।


“ভাঙা চালের ভেতর দিয়ে আসা মায়া 


যেন চাঁদের আলোর মতো স্নিগ্ধ।


সেখানেই বসবাস রাখি।”


                  ( অসফল আলো  )   


কবি ইন্দ্রনীল তাঁর টুকরো টুকরো ক্ষণ, গভীর অনুভব আর নিজস্ব আর্তি বাঙ্ময় করেছেন শব্দের ম্যাজিক কুহকে। কবিতার শরীরে তাই সচেতন ভাবে না হলেও অপ্রত্যক্ষে তিনি পরাবাস্তবতাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। আর এতে কবিতায় একটা মায়া সৃষ্টি হয়। তার রেশ পাঠের পরেও থেকে যায়। আর এখানেই কবির সিদ্ধি।


“আবার এমন কুয়াশা আছে 


যেখানে শুধুই ধ্বনিহীন প্রতিধ্বনি।


অর্ধেক জীবন পার করে এসে, সেই দৃষ্টিহীন 


মূক ও বধির কুয়াশাটুকুই অবশিষ্ট পড়ে থাকে।”


                               ( কুয়াশা কুয়াশা কথা )


আগেই বলেছি, কবির নিজস্ব এক দর্শন আছে। এ দর্শন দেখার না, উপলব্ধির। কবি তার অনুভব ও উপলব্ধিতে যে রাগিনী বাজিয়েছেন, সেখানে মুহূর্ত প্রতিভাত হয়েছে অনন্তে।


“দহনের ভেতর লুকিয়ে থাকে 


অম্লান মেঘ, ঝরায় অবিরত।”


                         ( অস্পষ্টতা )





                                                    ✍️ রবীন বসু  

                                                        

____________________________________

কুয়াশা কুয়াশা কথা 


ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য 


সুতরাং প্রকাশনী


সঞ্জয় ঋষি 


হাবড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা।


মূল্য - ১৫০/-



সূচিপত্র

ঠিক কবিতা ৯: তাপস রায়

 


তা প স রা য়

জানালায় কেন যে পর্দা টাঙানো হয় জানালা জানে না



 

একটা বড় নৌকোর  ভেতর একটা ছোট  নৌকো পুরে

মানে  যেভাবে একটা বাড়ির ভেতর  ঘর  বানিয়ে

আমাদের ভেসে থাকাথাকি ---- ক্রমে অশ্লীল হয়ে আসে সব

আর প্রতিটি গোপন আমরা গোপন করা শিখি, বাজারে যাবার আগে

পোশাক পাল্টাই, তুমি লক্ষ্য করো আমাদের বাইরের আমি

ভেতর আমিটি ক্রমাগত হেরে যায়, ঝুঁকে পড়ে

 জানাজানি হবে না কখনো ঘরের ভেতরে

                                  উপেক্ষারা কত কত পড়ে থাকে, জড়সড়

 

এভাবে বলা যেতে পারে, আমাদের তাকানোর ভেতর যেসব অভ্যাস ক্রিয়াশীল

ঠিক সেভাবেই দৃশ্যরা আসে, আমি নিশ্চিত বলে দিতে পারি

মৃতদেহগুলির চলাফেরা তুমি কখনও দেখ না, তুমি দেখতে জান না

সকাল হবার আগে দিনমণি কীভাবে কষ্ট পায়, তার আরো যে

ঘুম বাকি থাকে, আড়মোড়া ভাঙাটি্কে তুমি লাফাতে লাফাতে বলে দাও

সানরাইজ সানরাইজ

তার লাল লাল হাহাকার তোমাকে নন্দিত করে

তুমি পিক ফিফটিনের পাশে অন্য চূড়া খুঁজে যাও, নিজের পায়ের নীচে

পড়ে থাকে ব্যথাতুর অনন্ত খাদ

 

যেকথা বলছিলাম, শক্তি কি অকারণে হাঁকে, ‘প্রভু নষ্ট হয়ে যাই’! নষ্ট হই আজ


সূচিপত্র

ঠিক কবিতা ৯: লীনা রায়

 


লী না রা য়

জীবনমুখী গান

       


বড্ড নিরেট, ইঁটের দেয়াল

দম হাঁসফাঁস মাঝ দুপুরে –

সেই নদীটার চোখ ইশারায়

হাতছানি দিকশূন্যপুরে ।


হাতড়ে খুঁজে টুকরো ছবি

শীতের দুপুর বারবেলায়,

এক সওয়ারি সঙ্গে তার-ই

নাছোড় জেদে পার ভাসায়।


তারপরে কী? প্রশ্ন জাগে

চোখের দেখা? নগ্ন ভান ?

বড্ড জ্বালা মায়ার দোহাই

মান ভাঙানি সোহাগ টান।


গল্প কী তবে অল্প এত ?

অসময়ে ভাঁটার টান?

মন কেমনের বৃত্ত পথে

জীবনমুখী নচির গান।


সূচিপত্র

ঠিক কবিতা ৯: উত্তম চৌধুরী

 


উ ত্ত ম চৌ ধু রী

বাতাসেরা


মাঝে মাঝে শীতঘুম নামে।


মাঝে মাঝে ভাটাদের টানে

জলের গভীরে ঢোকে বোধের কণারা।


আলোর চোখে দাঁড়িয়েছিল যারা

মাঝে মাঝে অন্ধকার টেনে

পিচকালো মূর্তি হয়ে যায়।


এসব কথায়

কারও কিছুই যায় আসে না।

শুধু বিকেলের দিকে হাঁটে

অভিজ্ঞ মনের বাতাসেরা।



সূচিপত্র

ঠিক কবিতা ৯: খুকু ভূঞ্যা

 


খু কু ভূ ঞ্যা 

শেষের পাতা 



অনেক কিছু পাওয়া হলো না 

অনেক দাগ ক্ষত দগদগে পড়শীর মত খুব দূরে নয় 

ধাক্কা মেরে চলে গেছে চাঁদ 

রোদের সঙ্গে সঙ্গম করতে চেয়ে পুড়ে গেছে কপাল 


তবুও যে পাখি গান গায় চুপিচুপি বুকের ভেতর 

যে প্রিয় কাছে ডাকে শীতে মধুমাসে 

যে দুষ্ট আগুন নিয়ে ঘোরে অকারণ 

যে কুটুম ভাঙতে পারলে খুশি 

সব ভুলে যেতে চাই 


কোকিল ডাকছে চুনারু পাড়ার বাঁকে 

পাকা ধানের গন্ধে নবান্ন খুশি 

চড়কের ঢাক বাজছে 

যা পাওয়া হলো না থাক 

স্বজনের অশ্রু তো বাঁধা আছে আটপৌরে শাড়ির ভাঁজে,আজ ও আগামীর --   



ঠিক কবিতা ৯: অমিত চক্রবর্তী


 

অ মি ত চ ক্র ব র্তী


তুমি কেন ফুল মাড়াবে

 

তোমার জুতোতে ফুলফুল গন্ধ কেন

তুমি কি ফুল মাড়িয়েছ, হাওয়াতে ওড়ে এখন

আকন্দ ফুল, বিদেশী স্বপ্ন সাজে পোখরাজ রাঙা

পক্ষীরাজ। এখন তো রাধাচূড়ারও সময়,

সে কিশোরী মেয়ে, জোড়াবিনুনী রাইকমল,

গাছতলায় আগুন জ্বালাচ্ছে খুশির,

তুমি তাকে বরং গান শোনাও,

বের কর তোমার নাইটিঙ্গেল দোতারাটা।

যাযাবর গায়কপাখি তুমি, তোমার কেন থাকবে

আস্ফালনের ভাঁজ, মন কষাকষি দ্বন্দ্বভার, তুমি লিখবে

চকমকি ঘষা, চাতালে বা প্যারাসলে

চকখড়ি দিয়ে উপলকথা,

তুমি গাইবে ভ্রষ্ট আষাঢ়, নরম শালে সম্মোহনের

“শুনুন” শব্দ, পিছুডাকে, নীচুডাকে, নরম গলায়,

শরম গলায়, তুমি আঁকবে শ্বাসজমি ঘাস,

তুমি কেন ফুল মাড়াবে?



সূচিপত্র

ঠিক কবিতা ৯: দয়াময় পোদ্দার



দ য়া ম য় পো দ্দা র 

 প্রথম শিমুল 
 



অঙ্ক স্যার পুরো ক্লাসে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেন।


এসো হাওয়া বড়ই গাছে। এসো এসো ঝাঁকা দাও।

ঝাঁকিয়ে দাও হাওয়ার গুপ্তচর। এসো হাওয়া। চলো-


এসো অপরাধ বই। অঙ্ক স্যারের মেয়ে রমা হয়ে এসো।

বড়ই খেতে চাও। এইতো কান ধরে দাঁড়ালাম রমার সামনে।


পুকুরঘাটে ডাক পড়েছে। সন্ধে বেলা। গাছ-গাছালি।

ভুতুড়ে ছায়া। গা ছমছম। শিমুলদি তোমাকে 


ঠিক জল পরীর মতো লাগছে। ঠাটিয়ে চড় কানের গোড়ায়।


এসো হাওয়া। এসো গুপ্তচর। শিমুলদিকে খবর দাও-

আমি কান ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, স্কুলে !




ঠিক কবিতা ৯: তীর্থঙ্কর সুমিত

 


তী র্থ ঙ্ক র সু মি ত 

ভিসুভিয়াস যাত্রা


ট্রেন চলে গেছে প্লাটফর্ম ছেড়ে 
দূরের ঝাউগাছে
এখন একটা অসমাপ্ত রেখা
চায়ের ভাঁড়ের ধোঁয়ায়
তোমার মুখ
বিকেল আলোয় যত ধুলো
উড়িয়ে দেওয়ার সুখ
আর একটা গোটা পৃথিবী
যেমনভাবে যন্ত্রনার পদাবলী
আঁকড়ে থাকে
আমার টেবিল কামিনীতে

আর তোমার চোখে আঁকা ভিসুভিয়াস যাত্রা...


ঠিক কবিতা ৯: তন্ময় কবিরাজ

 


ত ন্ম য় ক বি রা জ

 সুবর্নরেখা 


ভালোবাসার নাম রাখিনি কোনোদিন 

শুধু একবার বলেছিলাম সুবর্ণরেখা


জীবন্ত ঝিনুক

আমার নৌকোর পাশে ঘুমিয়ে পড়ে

স্বরবর্ণে সুখ 

আর সহজপাঠের প্রথম পাতায় ভালবাসা


আমি নাম রাখিনি তোমার

যেখানে থেমেছি ,সেটাই তুমি


আরও কিছুটা চলো

আমার নামেই লোকে তোমাকে ডাকবে তখন....



ঠিক কবিতা ৯: সৌমাল্য গরাই

 


সৌ মা ল্য গ রা ই

আলাদীন


অন্ধকারে- অন্ধকারে ঘষা লেগে

জ্বলে উঠি আলোক বিহীন

নই তো মানুষ নই তো ঈশ্বর অথবা শয়তান 

 জিনের পোশাক পরে 

বসে আছি নিঃস্ব আলাদীন


ইহের কুকুর যেন আজ্ঞা নিপীড়িত

 ঘন্টা শুনে ভ্রান্ত লেজ নেড়ে 

ছুটে যাই মাংসখণ্ড মুখে


রয়েছে নমস্য প্রভু, খুরস্য শিকল বেঁধে বলে

সমস্তই  তোমার, শেষে  কেড়ে নেয় অকস্মাৎ 

  এই তো ন্যায়ের রীতি, নিয়মের সার

যেমন প্রদীপ জানে — 

যে আলো নিজের ছিল 

সেই তাকে পোড়াবে আবার


ঠিক কবিতা নয় : অষ্টম সংখ্যা

 

ঠিক কবিতা নয়

¤সোনালি কবিতা

অমিত চক্রবর্তী,       তাপস রায়,      দয়াময় পোদ্দার



¤রঙিন দিনের কবিতা

সৌমাল্য গরাই,          খুকু ভূঞ্যা



¤হলুদ কবিতা
লীনা রায়


¤পারাবারের কবিতা

উত্তম চৌধুরী,    পিন্টু ঘোষ 



¤বুক রিভিউ

       
(*কবির নামের উপর স্পর্শ করে কবিতা পড়ুন*)
(*কবিতায় ব্যবহৃত প্রতিটি চিত্র পিন্টু ঘোষ কর্তৃক অঙ্কিত*)
—————————————————————



অনলাইনে সংগ্রহ করুন 》Buy



পুস্তক আলোচনা: শান্তি

 


✍️তন্ময় কবিরাজ


বার্ণিক প্রকাশন থেকে প্রকাশিত কবি জয় গোস্বামীর "শান্তি"কাব্য। মোট ৩২পাতার বইয়ে ২৭টি কবিতা। ভাবের সুক্ষতার পাশাপাশি কবি তার ছন্দ বৈচিত্র্যের স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন। আধুনিকতার সঙ্গে চিন্তন মননের ককটেল।  একাকীত্বের পরশ পাথরে সুখের অমৃত পান করেছেন কবি।শুরুতেই বলেছেন,"শান্ত জলধারা ...ভারী প্রস্তর সেও তো শান্ত ..।"কবির সুখ অন্তর্মুখী। শূন্যতায় ভেসে থাকতে পছন্দ করেন_"সারা দিন ধরে ভেসে থাকা ভেসে থাকা/সারা রাত ধরে ভেসে থাকা ভেসে থাকা"। মুক্ত বিহঙ্গের মত কবি ভাসছেন কবিতার ডানায়। কিটসের নাইটিঙ্গেলের মতো শান্তি তাঁকে দেয় ভাবনার সুখ। ভালোবাসেন ঘর।জন ডানের বন্ধু তিনি। অনু পরমাণুর বিস্ফোরণ সেই ঘরেই_".. এই ঘরটির কাছে কোনোই দোষ করিনি।"অপূর্ব মেটাফিজিক্যাল কনসিটের দ্রবণ।৬ ও ১৩ নম্বর কবিতায় কবি শান্তির সুখে ফিরে তাকান অতীতে _"উদাসী মা মুড়ি ভাজে..।"মহাজাগতিক সূত্রে জানতে চাইছেন শান্তির রহস্য। উপেক্ষা করেছেন বেন্থামকে। কল্পনা সূক্ষ্মতর। ব্যবহার করছেন রেটরিক _"রাত্রি ঝরছে", "থৈ থৈ একরাত সরোবর হয়"। শান্তির সৈকতে জমেছে উইলিয়াম ব্লেকের বালুকণা। ১৯নম্বর কবিতায় বুনেছেন নস্টালজিয়া_বাবা,মা,ভাই, চালস লাম্বের ডাইরির মত।"কিন্তু আমি কোথায়?"আমি কি "সিড়িতে বসেছি। এক পা নীচে জল।"শান্তি কবির চোখে নারী। শান্তি ক্লান্ত। কবির আদেশ,"তুমি ঘটি ভরে জল এনে শান্তির দুটি হাতে আর দুটি পায়ে ঢালো সযত্নে _"। ভাবের সরলতায় নেই যতি চিহ্নের ব্যঞ্জনা। শুধু প্রশ্ন চিহ্ন আর আবেগের উল্লাস_শান্তির ইউরেকা। কিটসের মেলানকলির মত কবি বিষাদেও সৃষ্টিশীল। কবির আবেদন,"আমার শান্তি ভিক্ষে।"কল্লোলের উল্লাস না থাকলেও শান্তির চুপকথাতে মিশে আছে বারোক আর সুররিয়ালিজম, কখনও হেনরি ভনের ফেলে রাখা অ্যালবাম। কবি জয় গোস্বামী হৃদয় ভাসান অলকানন্দার স্রোতে। বলে গেলেন '"এই রাজ্যের দরজায়/প্রহরী বলতে শুধু/শান্তি। একাই শান্তি।" 



✍️ তন্ময় কবিরাজ


_____________________________________
■ শান্তি
জয় গোস্বামী 
বার্ণিক প্রকাশন 
মুদ্রিত মূল্য : ৮০ টাকা


Monday, March 15, 2021

ঠিক কবিতা ঌ:সপ্তম সংখ্যা

 





■ সূচিপত্র ■









ঠিক কবিতা ঌ: সম্পাদকীয়



 সম্পাদকীয়


পলাশ ... পলাশ ...


~পিন্টু মুকুল 

সম্পাদক 

ঠিক কবিতা নয় 

ঠিক কবিতা ঌ: নাসির ওয়াদেন



 নাসির ওয়াদেন 



দুপুর 

         

অল্প অল্প করে দুপুর নামছে
মেঘের বুকে
দুপুর ঘুমিয়ে পড়েছে

আলো বুকে নিয়ে
দুপুর ঘুমিয়ে পড়েছে

আলোও ঘুমাচ্ছে
বাতাসও ঘুমাচ্ছে
শুধু পোড়া হৃদয় জেগে

একটু একটু করে ক্লান্ত
হয়ে পড়ছে দুপুর

স্বপ্ন জাল বিছিয়ে
মায়া ধরছে দুপুরের জলে
দুপুরের চোখ
ঘুমাচ্ছে একাকীত্ব হয়ে ।

ঠিক কবিতা ঌ: প্রসাদ সিং



 প্রসাদ সিং


ফটো ফ্রেমের ঈশ্বর


১.
আকাশে থাকেন ঈশ্বর
কাঁচের গায়ে আকাশ দেখতে পাই
মানুষের প্রতিবিম্ব দেখেছি আয়নায়
ঈশ্বরের প্রতিবিম্বে নাকি মানুষের সৃষ্টি
২.
ফটো ফ্রেমে মানুষ বন্দি করেছে আকাশকে
ঈশ্বর সর্বব্যাপী
মানুষের জন্য একটা ব্যক্তিগত ঈশ্বর থাকুক
থাকুক একটা ব্যক্তিগত আকাশ 

ঠিক কবিতা ঌ: দেবার্ঘ সেন

 


দেবার্ঘ সেন


ক্ষমতা


পুকুরঘাটে ছুঁড়ে ফেলে দিলে মশাল
নিভে যায় তার আগুন
অর্থাৎ মশাল কাজে আসেনি।

যেহেতু, জল নেভানোর জন্য আগুন কেনার বিলাসিতা
নিছকই অনর্থক
সুতরাং তুমি অপচয়ের বিশ্রাম।

আর তুমি বলেছিলে, আমার ক্ষমতা কেড়ে নেবে..

অথচ তুমি জানতে না,
আমার ক্ষমতা বলতে শুধুই তা, লেখার ক্ষমতা।

ভেঙে দেখাও দেখি আকাশের রং..

ঠিক কবিতা ঌ: অসীম মজুমদার


 

অসীম মজুমদার 


আন্তর্জাতিক

       

ঘটনা এখোন কোনো মানুষের নয় ,

নয় জাতির

পৃথিবীটাই যখন জর্জ্জরিত 

তখন সব আন্তর্জাতিক ।


গণধর্ষন শূন্যস্থানে 

আওয়াজ আকাশে

মাটিও নির্বীজকরণে ,


বিচিত্র অন্যায়ে 

মৃত্যুর খবরে 

আর বিচারের ফাঁকে

বেঁচে থাকা জামিনে ;


রেষারেষি অবিচার

বাহুল্যে 

অন্তরায়

যতক্ষন না বাঁচানো যায়...

ঠিক কবিতা ঌ: বিশ্বজিৎ রায়

 


বিশ্বজিৎ রায়


মোনালিসা এবং 


ভাবনাগুলো যখন স্বপনের রঙে
                       স্বপ্নহীন বাস্তবতা,
বাস্তবতা অনেক অনু- বন্ধ
                        প্রেম এবং
আরো একটি অবস্থান আরো
                    একটি কঠিনতা;
কঠিন জীর্ণ পায়েতে সভ্যতা এগোয়,
চিন্তাশীল অমোঘ মরুময়
                        আহ্বানে।
আহ্বান যেদিন ভালোবাসা
                        অনু- প্রেম্।
দূর্ রহস্যময়ী একা অঙ্গন তার
                               অঙ্গনে__
চেনা চাঁদ তার চন্দ্রাদেশ,
                    বহু -বছর।

শূন্য হাতে বাকি শূন্যতা চেয়ে
                        একটি প্রেম।
তবু প্রেম, একজন মানুষকে ভালো-
                           বাসতে অনেক__
বোধহয় তার পর এসেছিল রাত
                           দেশে কল্পনা।
একা নারী ভালোবাসতে পারে এক-
                         জন পুরুষ সম্পূর্ণ;
চাঁদ উঠেছিল যে'দিন একাদশী ত্যজি
                          এমনি মরুর দেশে।।

ঠিক কবিতা ঌ : গোবিন্দ মোদক



গোবিন্দ মোদক 


স্বপ্ন-মরীচিকা 




নাব্যতা এঁকেছে নারী পীন-পয়োধরা , 

সারা অঙ্গ জ্বলে যায় কামজ্বরে মরা ! 

জাহাজের মাস্তুল ওঠে ফুলে-ফেঁপে , 

বড়ো জ্বালা সারা গায়ে, ওঠে কেঁপে কেঁপে ! 

যৌবন-গন্ধে ভরা মরীচিকা বন ,

নারী তুমি দয়া করো কামনার ধন ! 

পরিমিত উরু, বুক, যোনি ও জঘন , 

সান্নিধ্যের উষ্ণতায় পেতে চায় মন ! 

হে নারী সদয়া হও দাও আলিঙ্গন,

মদনের শরে দেহে কী যে উচাটন ! 

সোহাগের বস্তু দুই গোলাকার স্তন,

করিতে দাও এবে কঠিন মর্দন !

তুমি রম্ভা, উর্বশী বিপুলা বিস্ময়, 

কাছে এসো, ধরা দাও, হও গো সদয় ! 

নষ্ট প্রেমিক আমি যাবো উচ্ছন্নেতে

আর কিছু চাই নাকো, চাই তোমায় পেতে ! 

বর্ষা পড়ুক ঝরে সারারাত ধরে ,

তুমি আমি নিশি-যাপন একাকী এ ঘরে !

এই বলে পুরুষ যেই নারী কাছে যায়, 

হুতাশন বাজে ঘরে কেউ কোথা নাই !

ঠিক কবিতা ঌ : দেবপ্রিয় হোড়

 


দেবপ্রিয় হোড়


নতুন স্বাভাবিক


নতুন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে পুরোনো জীবন,

আপোসহীন আপোসে অতিমারীর সাথে বন্ধন।

মাকড়সার জালে বন্দী খাদ‍্য-বস্ত্র-বিনোদন,

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অনিশ্চয়তায় দিনযাপন।

জীবন চলে যায়, তবুও কোথাও একটা শূন্যতা,

নতুন স্বাভাবিক জীবনের দিনলিপি লেখে ভিন্ন বাস্তবতা।

ঠিক কবিতা ঌ : তীর্থঙ্কর সুমিত



তীর্থঙ্কর সুমিত


আত্মকথন




এখন বিশেষ কোনো ব্যথা পাইনা
চাঁদের গুহার দিকে তাকিয়ে দেখি
আমার ছায়া ___
একটানা বেশ কয়েকদিন
সহসা রাতের বেলায়
আমার মা 
ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে
ঘুম পাড়িয়ে দেয়
স্পষ্ট অবহেলায় দেখি
ফলসা গাছটা
বেশ বড় হয়ে উঠেছে

ডানা না ঝাপটে কিভাবে আকাশে ওড়া যায়
তার একটা রিহেসাল করছি মাত্র।

ঠিক কবিতা ঌ : তমাল চক্রবর্তী



তমাল চক্রবর্তী


অন্নদাতা কৃষক



কৃষক তুমি ফসল ফলাও

 লাঙ্গল কাস্তে হাতে, 

সকাল থেকে সন্ধ্যা তোমার

 মাঠেই সময় কাটে। 


কর্মঠ পরিশ্রমী উদয় অস্ত 

জমির জন্য খাটে, 

বিক্রি করে ফসলের যেন 

ন্যায্য দাম আসে। 


জোটে না তোমার দু মুঠো ভাত

 খাওয়ার সময় পাতে, 

ঋণের বোঝায় ডুবন্ত হয়ে

 অভুক্ত পেট কাঁদে। 


বিনিদ্র রাত ক্ষুধার্ত হয়ে

 চিন্তার স্রোতে ভাসে, 

আলাদিনের প্রদীপের ন্যায় 

কেউ যে নেই পাশে। 


অন্নদাতা ঈশ্বর তুমি 

দায়িত্ব তোমার কাঁধে, 

ফসল ফলাও বলেই তো সব

 অভুক্ত পেট বাঁচে।


রোদ বৃষ্টি গরম ঠান্ডা উপেক্ষা করে

 খাটছে যারা মাঠে, 

 খিদের জ্বালা মিটুক তাদের 

বাঁচুক কৃষক আগে। 

Saturday, February 20, 2021

ঠিক কবিতা ঌ : ষষ্ঠ সংখ্যা

 

সম্পাদকীয়


■ সূচিপত্র ■ 


রবীন বসু


অর্ণব মিত্র


স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায়


শান্তনু গুড়িয়া


শুভজিৎ দাস


সৌমেন দেবনাথ


দীপক মুখোপাধ্যায়


চন্দন পাত্র


অরবিন্দ মাজী


ঠিক কবিতা ঌ : সম্পাদকীয়

 


সম্পাদকীয় ✍


কবি-জীবন জন্মে
কবি-জীবন মৃতের

আমাদের কবি-জীবন শিমুলে-পলাশে

~পিন্টু মুকুল
সম্পাদক
ঠিক কবিতা নয় 

ঠিক কবিতা ঌ : রবীন বসু



 র বী ন ব সু


ভবিতব্য



শীতঘুম ভেঙে জেগে উঠবে সাপ

অনন্ত ক্ষুধার পেট

অগ্নিজ্বালা জঠরের তাপ

জীবনানন্দের ইঁদুর শুধু চেয়ে দ্যাখে

হতচকিত বিস্ময় নিয়ে নির্বাক

সম্মোহিত দৃষ্টি থেকে অব্যর্থ ফাঁদ

এবার লালার রসে জারিত খাদ্য

অমোঘ সে ভবিতব্য নিঃশব্দ হাঁটে।


এও এক আত্মহনন, পায়ে পায়ে

খুঁজে নেয় সব ব্যর্থ মনস্তাপ

জীবন দিল কি কিছু? সম্পর্ক-ভিত

নাকি অহি-নকুল, এটাই ভবিতব্য।

ঠিক কবিতা ঌ : অর্ণব মিত্র

 


অ র্ণ ব মি ত্র


বোধন



কাল যদি মা জন্মাতিস তুই, 

ঋতু হত শরৎকাল,  

শিউলি ভেজা ভোরেতে কোথায় চলরি রে তুই ফেলে রে মায়াজাল।

লড়াই কত করলি রে তুই আর কত করবি বল, 

যুদ্ধ শুরু তোর সেই আদ্দিকালেই।

মা যে তুই আসবি ফিরে, শরতের ঐ করুণ ভোরে।

কোন হাতে তোর করব বোধন? 

মনুষ্যত্ব এখনও হয় নি রে শোধন ।

কৈলাসে ফিরিস মা তুই সমারোহে, 

হাসরথে কেন রে মা জ্বললি রে তুই হিংস্রতার অনলে! 

কি দিল মানবজনম তোরে? 

মানবতা আজ অতলে । 

মা তুই আসিস আবার সুবাস ফিরুক ফুল পরাগে ।

চণ্ডী নামে বোধন হোক তোর, অস্ত্র উঠুক ঐ খড়গে!

ঠিক কবিতা ঌ : স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায়



 স্নে হা শি স মু খো পা ধ‍্যা য়


টার্মিনাস নয় 





অনেকের সাথেই আজকাল বাসস্টপে দেখা হয়।

টার্মিনাস নয়। শুধু একটা স্টপেজ।

সেখানে অনবরত বৃষ্টি হয়।

এমন বৃষ্টি, আর এতো মিষ্টি লাগে...

আমি বাসে উঠতেই ভুলে যাই। 

অজস্র সময় ধরে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকি।

টার্মিনাস হলে আমার মুখ অন‍্যরকম হ'তো না কি? 


তবে কি টার্মিনাসের কথা ভেবেই বাসস্টপ তৈরি হয়?

অত টার্মিনাস তৈরি হলে মানুষ কোথায় হাঁটবে?

মানুষ কি হাঁটে? বাষ্পের মত উড়ে যায় না কদাচিৎ?

এক্সাইড ঘেঁষে একটা পোক্ত স্টপেজ হওয়া উচিত।...


ইত‍্যাদি কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মেঘ আসে।

সাদা, কালো, নীল, হলুদ...লাল। রোদের রঙ

মুছতে মুছতে মানুষের কেমন বয়স বেড়ে যায়!

চোখের চশমার ভেতরে চোখের কালির দাগ―

দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, তাকে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। 

চিনি না, জানি না। তাতে বাধা কি? কি বাধা, দেখতে?

অনেক বাসস্টপ ফুরিয়ে গেছে, টার্মিনাস হতে হতে। 

ঠিক কবিতা ঌ : শান্তনু গুড়িয়া

 


শা ন্ত নু গু ড়ি য়া




মুঠো



শক্ত করলেই বশ্যতা

খুললেই স্বাধীনতা



ইচ্ছা 


চেপে রাখলে বেরসিক

প্রকাশ করলেই হ্যাংলা



ঈর্ষা


গোপন দংশন

বিষিয়ে দেয় মন



মুখ


বন্ধ রাখলে গম্ভীর

খুললেই বাচাল



দেয়াল


তুললে নাকউঁচু

ভাঙলেই উঁচু মন



তালা 


দিলে সুরক্ষা

না দিলে হরিলুট



লজ্জা 


ভূষণ নয় আধুনিকার ---

দিকে দিকে বাড়ছে বিকার

ঠিক কবিতা ঌ : শুভজিৎ দাস

 


শু ভ জি ৎ দা স 


শাণিত নির্জন নদী




নদীর দুপাড় জুড়ে 

ইঁট-কংক্রিট এর পাহাড় গড়ে উঠলেও 

নদীটা আজ খুব একা ।

বুজে আসা নদীর স্রোত আজ স্তিমিত হলেও,

নদীর দুপাড়ে মানুষের স্রোতের গতি দ্রুত বহমান। 

দুপাড়ের নুইয়ে পড়া ধ্বংসস্তূপগুলোয় 

দ্রুত পলেস্তারা পড়লেও ,

নদীর শেষ বেঁচে থাকা অংশটুকুও

সময়ের ভারে অক্ষম মানুষটির মতোই,

সকলের কাছেই উপেক্ষিত।

মজে যাওয়া পলির আর পানার ভারে,

নদীর গৌরবও আজ অস্তগামী 

এখানে গড়ে ওঠা সকল নবাগত বসতির কাছে।

গৌরবহীন নদীর ঘাটগুলোও 

 সময়ের চাকার বহমানতায় 

রূপান্তরিত হয়েছে সরীসৃপ - পরজীবীর বাসস্থানে।

তবুও বর্ষার আবহে নদীটা

আগুনের শেষ আঁচের মতো কিছুটা শাণিয়ে উঠলেও সংস্কারের অভাবে সেই আঁচও নিভে যায়।


এই অস্তগামী গৌরবযুক্ত নির্জন অসহায় নদীরটির 

শেষ সঙ্গী হয় হয়তো কোনো ভিক্ষুক 

হয়তো বা কোনো হেরে যাওয়া অসহায় মানুষই।

ঠিক কবিতা ঌ : সৌমেন দেবনাথ

 


সৌ মে ন দে ব না থ 


নগরবধু




পুষ্পশয্যায় শায়িতা মদোন্মত্ততা

বিবসনার শরীরের ভাজে ভাজে বিদ্যুৎকণা

প্রতি রাতে তার সাথে বেডশো থাকে

কতিপয় পুরুষের পর্যায়ক্রমে

বস্তীর ভিউকার্ড বহনকারী বখাটে থেকে সাধুবাবাও

তার বিছানায় স্বাদ নেয় এসে

শারীরিক ছলাকলা দেখে নয়ন তুষ্ট করে

নতুন পুরুষের সাথে রাত জাগলে তারও ভালো লাগে

তার শরীরের উত্তাপে সিক্ত সকলে পায় কামনার স্বাদ রাত বিরাত

মহাপুরুষ রচনার ভ্রূণবীজ উত্থিত অঙ্গ থেকে

ঝরে পড়ে নগরবধুর নর্দমা খালে

শঙ্খ স্তন্য সুধা পান করে, নাভিদেশে মুখ লুকিয়ে

যৌন বনিয়াদ ভাঙে খোঁজা পুরুষ।

যৌবন যদ্দিন শরীর ভাঙিয়ে পকেট ভরে বারো জনের প্রিয়া

অতপর ফুটন্ত টগবগে যৌবনা দেহে ভাটা এলে 

চটক বিন্দুমাত্র না থাকলে

মাঘের সাপের মতো ঘুমায়

অবশ্য ঘেঁয়ো কাঁঠালে মুচি খদ্দের লাগে বৈকি!

ঠিক কবিতা ঌ : দীপক মুখোপাধ্যায়

 


দী প ক মু খো পা ধ্যা য়


উষ্ণতা নেই
 



কুয়াশার চাদর জড়িয়ে আছে সারা শহর 

ঘরে রুম হিটার জ্বলছে 

দগ্ধ করছে বাতাসকে 

উঁচু বাতিস্তম্ভের নিচে 

স্বেচ্ছায় পুড়ে মরার জন্য 

কিছু পতঙ্গ নিজেদের শেষ বারের 

মতো প্রস্তত করছে । 

নির্জন পথের ধারে 

কৃষ্ণ প্রসাদের 

গাড়ি বারান্দার পাশের 

আবছা অন্ধকারে মেয়েটির কাঁধে 

হাত রেখে যে যুবক কথা বলছে 

আর হাসছে ;

তার বাঁদিকের গালে ক্ষতের দাগ 

সে আমাদের পাড়ার ছেলে নয় 

তবুও তাকে আমি চিনি । 

মেয়েটি তার প্রেমিকা । 

ওরা চলে গেলে 

সারা শহর একটু একটু করে

শুষে নেবে কোনো রমণীর লিপস্টিকের রঙ 

অথবা নেল পালিশ । 

রাত গভীর হলে কোনো মাতাল যুবক 

ঘরে ফিরবে বেসামাল হয়ে 

কোনো বেয়াদব ছেলে হয়তো

অন্য কোথাও রাত কাটাবে আজ । 

উষ্ণতার খোঁজ করবে হয়তো কোনো 

নারী .....

যার যৌবন আর কয়েকটা দিন পর 

চলে যাবে ......

আমার রুম হিটার কাঁচা 

বাতাস টেনে নিয়ে শুস্ক করছে ঘর 

তার কাছে ঋণী থাকব চিরদিন 

শুধু উষ্ণতার জন্য । 

ঠিক কবিতা ঌ : চন্দন পাত্র

 


চ ন্দ ন পা ত্র


পাপাঘ্ন কঙ্কাল




 মুখাপেক্ষী ঘর্মাক্ত মুখগুলির জন্মতেই মৃত্যুর বীজ,

অপুষ্ট জরায়ুর গোপন ষড়যন্ত্রে অনিচ্ছার করাঘাত ।

ভূমিষ্ঠে, বজ্জাতির কাঁটাতারে ক্ষত-বিক্ষত দেহে,

সৃষ্টির পালে বাঁধা দাঁড়ে, নবারুণের মুক্তির তপস্যা।

মন্ত্র'রা সব আত্মজ ঘাম, আশীর্বাদ লুট হয় অহরহ,

পেট আর প্রজন্মের অশ্রুতে ভেসে যায় প্রগতির পথ।

রসদের উৎসও , রাজদ্বারে চাটুকারের ভিক্ষায় ব্যস্ত,

নগ্ন শাসকের হাতে; শোষনের মুষ্টিভিক্ষা দেদার।

আলোকের আলো-ছায়ায়, চেতনার লাশের স্তূপে, 

 সংগোপনে হেঁটেছে; অন্ধ অলৌকিক মাহাত্ম্য। 

অভাব বঞ্চনার শেকড় খুঁজেছে পরলোকের নরকে, সন্ধিক্ষণের সুড়ঙ্গে চুরি গেছে  জিয়ন সুখ ।

জমায়েত প্রতিকারকে ধ্বংস করেছে উলঙ্গ চক্রান্ত

 যীশু'রা ক্রুশ পরেছে যুগে যুগান্তরে কূট বিচারে।

ঘুম ভাঙেনি, আধমরা পশুদের খোয়াড়ের দেওয়াল, দু'মুঠো খাদ্যে  বিক্রি হয়, প্রতিবাদ মিছিলের জমি।

ঠিক কবিতা ঌ : অরবিন্দ মাজী

 


অ র বি ন্দ মা জী


জীবনের হিসেব


আমাদের  বয়স বাড়ছে দিনে দিনে, 

সুদিন আসে, দুর্দিন আসে কালের নিয়মে। 

যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ-

সবইতো শিখেছিলাম সেই ছোটো বেলায়, 

তবুও এখন আর হিসেব মেলাতে পারিনা-

জীবনের হিসেব মেলে না যেন কিছুতেই... 


প্রতি দিন একটু একটু করে পাল্টে যাচ্ছি, 

বন্ধু বান্ধব, স্বজনদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে, 

হয়তো ভালো নেই, তবুও কেউ রাস্তাঘাটে -

যদি জিজ্ঞেস করে - কেমন আছেন? 

শুধু বলি ভালো আছি, আপনি? 

তারপর পথ হাঁটি আনমনে সামনে সমানে... 


যেতে হয় বলেই,মাঝেমধ্যে ডাক্তার খানায় যাই, 

প্রেসার, সুগার, থাইরয়েড চেক্ করাই, 

নুন কম, চিনি কম, টক ঝাল সবই কম, 

কানে শুনি কম, চোখেও দেখি কম, 

এখন আর হিসেব মেলাতে পারি না-

জীবনের হিসেব মেলে না যেন কিছুতেই... 

Tuesday, January 26, 2021

ঠিক কবিতা ঌ : পঞ্চম সংখ্যা

 





●সূচিপত্র ●









ঠিক কবিতা ঌ : সম্পাদকীয়

 


সম্পাদকীয় ✍

এইতো ওড়ালাম ধুলি

এইবার
কেউ বলে বলুক পাগল
কেউ বলুক স্বেচ্ছাচারী...

~পিন্টু মুকুল
সম্পাদক
ঠিক কবিতা নয় 

ঠিক কবিতা ঌ : উদয় শংকর দুর্জয়

 


পরাবাস্তব জোনাকদল


উ দ য় শং ক র দু র্জ য় 


দহন নিভিয়ে সূর্য-পরাগ। 

এ বর্ষা পেরুলেই হিমকাঠ বোঝাই হাওয়ারথ দাঁড়িয়ে থাকবে ত্রিনেত্রে; এক চোখে স্নাত রয়েল-ডক, অন্যাকাশে ধূপজ্বলা শিউলির আধো-গোলাপী ঠোঁট। বিধুর অয়ন ছেড়ে লবঙ্গ বোঝাই জাহাজ এসে ঘ্রাণ কুড়িয়ে নিতেই, বিহ্বলে লেখা একশ'টা অষ্টোক সুর ভেঙে যখন উড়ে যাবে রহস্যময়ী খমক, তখন তপ্ত পারদে ঢালা প্রপঞ্জের রঙ, মিশে যাবে দগ্ধ অভ্রের গলিত ঘ্রাণে। এরপর স্বর্ণকুচি মাখা শরত যেন, পরাবাস্তব মায়ার টানে স্টারলিঙের ডানায় লুকিয়ে পাড়ি দেবে ভৈরবের কোলাহলে। 


সপ্তসুর-দগ্ধ-স্নাত-সাতী। 

সন্ধ্যাকুমারীসেঁতার হেঁটে এলে জলের পাহাড়, এক অবিরাম ঠুমরি নেমে পড়ে রাত্রি বক্ষে। কতবার খুলে পড়েছে সে উদ্যানের গোপন বাক্সে জমা মাস্তুলের ঘুড়ি! তবু উড্ডয়নের প্যারাসুট সংগীত, অচেনা ভেবে পাড়ি দ্যায় আরেকটি মহাকাল। 


অকারন কোলাহল বোহেমিয়ান।

পাথরের উপর পাথর ব'সে, জমাট বরফ খুলে রাখে কপাট; অযুত লহরী ভেঙে, অতিথি হয়ে ওঠে রাক্ষসীর সবুজ চোখ; কর্নিয়ার ফাঁকে পাঁচতারা বিকেল তাড়িয়ে আনে জুনিপার গ্রাম। শরত তখন হরিদ্রাভ আগুন মেখে সবে ভোরের বাদ্য শুনিয়েছে বাকলের কর্ণকূহরে। হিম-রিম-হিম যেন পিয়ানোর রিড থেকে তুলে নিয়েছে আগমনী ট্রাম, হুইসেলের লোকালয়ে বনোহরিনী, পাতার অরণ্যঝোপ থেকে জোনাকদল আলো কুড়িয়ে এনে, কালভ্রমনে প্রহর রেখেছে বাজি। 

ঠিক কবিতা ঌ : অচিন্ত্য রায়



দেবতা লাঙল ও কৃষক


অ চি ন্ত্য রা য়

এক।

হাঁটছে একান্ত শহর জনকোলাহল
অলস রোদে হেলে আছে রাষ্ট্র
রাজপথও জানে-
কোদালের নাম ঈশ্বর ভগবান...

দুই।

ঝিম ঝিম হিমেল শীতের শরীর
কালো ছাতার ভেতর কাদখোঁচা
হাওয়ায় শ্লোগান ভাসে-
তবু কেউ শোনে না, চুপচাপ থাকে...

তিন।

একটা কাস্তে চলতে জানে
ঘুমন্ত ফসলে সোহাগ লিখতে জানে
যতটা নীরব সে থাকতে শিখেছে
গর্জাতে পারে তারচেয়ে বহুগুণ...

চার।

মাটির গর্ভে থেকে তুলে আনা
হাড় কঙ্কাল মৃতমূর্তি দেখেছেন?
ঘন কুয়াশায় সে কেমন-
পার হয়ে যায় ঝুলন্ত সূর্য
সে শুধু কৃষক নয়, দ্যাখো-
একজন মানুষও...

পাঁচ।

আগুনের সঙ্গে খেলা করা
কোন বেদেকারের কর্ম নয়
কৃষক তেমনি প্রজ্বলিত গোলা
হে মালিক সাবধানে থেকো
দংশালে, ডান হাতে অন্ন জুটবে না...

ছয়।

জোয়ালেরও অনেক রিপু আছে
সে'সব কাঁধে নিলে বোঝা যায়
অথচ দ্যাখো, যুগযুগ ধরে
রাষ্ট্রের কাঠামো মুদোনি
দেবতা লাঙল ও কৃষক বয়ে চলেছে...

ঠিক কবিতা ঌ : ইন্দ্রাণী পাল

 


বেহালা

 ই ন্দ্রা ণী পা ল 


এক একটা বিকেলে অসুখ আসে না

সেদিন ময়নার মা কলতলায় এসে দাঁড়ায়

আর অন্ধকারের ভিতর থেকে অজস্র চিঠি উড়ে এসে

পায়ের কাছে লাট খেতে থাকে


একপাল ভেড়া এইমাত্র ছাড়া পেয়ে আপাতত রাস্তার

দখল নিয়েছে। ধুলো ওড়ে...

এই এত এত সস্তা সম্পর্কের বোঝা বইতে বইতে

মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে আসে

আর একটা ট্রাম থেকে অন্য একটা ট্রামের অন্ধকার দূরত্বটা বাড়তে বাড়তে

ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলে


এখন শীতের রাত যেন একটা কাটাপড়া লাশ


অথচ বাতাসের ভিতর পুড়ে যাওয়া ঘাসের কাছে বসে

কে যেন বেহালা বাজাচ্ছে...। সারাদিন।

ঠিক কবিতা ঌ : প্রসাদ সিং

 


শামুক

প্র সা দ সিং
১.
আলোর অবস্থান আমার বাড়ি থেকে বহুদূর
আমি যেতে পারি না আলো আসতে পারে না
স্বপ্নের মধ্যে আমি শামুক হয়ে যাই
২.
আমরা দেওয়াল ও খোলা আকাশের তর্কে আছি
মহাপুরুষরা সবাই গাছতলায় মোক্ষ পেয়েছেন
ওদিকে আত্মকেন্দ্রিক বলে শামুক দুর্নাম

ঠিক কবিতা ঌ : অভিষেক ঘোষ

 


শব্দবন্দি

অ ভি ষে ক ঘো ষ ।


আমার ছ্যাতলা-ধরা উঠোন জুড়ে

বিষণ্ন সব ভবঘুরে

শব্দেরা পাক্ খায় ।


উদভ্রান্ত গ্রীষ্ম দিনে

অসম্ভবের বৃষ্টি কিনে

আমার দিকে উদাস চোখে চায় ।


আলসে ঘুরে বৃষ্টির জল

নামায় শব্দ অনর্গল

কাঁপতে কাঁপতে পায়ে-তে জড়ায় ।


শরৎ এলে ঢাকের বোলে

তুলোর মতো মেঘের কোলে

নাচতে থাকে আলোর ইশারায় ।


শীতে মায়ের উলের কাঁটায়

শিল-নোড়া আর বাটনা-বাটায়

মৃদু মধুর শব্দেরা জন্মায় ।


আমি আমার কলম খুলে

খাতার পাতায় মনের ভুলে

বেবাক সাজাই, যেমনটি ওরা চায় ।

ঠিক কবিতা ঌ : শুভজিৎ দাস



ফেলে আসা মেনুকার্ড

শু ভ জিৎ দা স


বিষাদময় দ্বীপের শপিং মল, রেস্তোরাঁ হয়ে অশ্লীল হাসি হাসতে 

হাসতে বেরিয়ে আসি ,

আর ছুঁড়ে ফেলি এক পরিত্যক্ত আধবোজা সিগারেটের মত মেনুকার্ডকে 

 ওই বোকার মতো তাকিয়ে থাকা এঁটো শালপাতার স্তূপে।

 কিছু কচি শালপাতারা মেনুকার্ডকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করলো এঁটো খাওয়ার যদি থাকে লেগে তাই বলে।


আবার টলমল পায়ে বেরিয়ে আসি 

সেই বিষাদময় দ্বীপ থেকে, 

দেখি ভিক্ষুক গাছের নীচের সেই এঁটো শালপাতারা ভেসে গেছে এক অনন্তগামী স্রোতের জালে ,

আর ফেলে গেছে সেই ফেলে আসা

 মেনুকার্ডকে ।।

ঠিক কবিতা ঌ : সমাজ বসু



একজোড়া নদীর গল্প


স মা জ ব সু

একটা নদী জমে বরফের নীচে

শুয়ে আছে নিস্তেজ--

তার নিস্পন্দ শরীরের ওপর মেতে আছে

সৌখিন জনপদ।


একটা নদী শুকিয়ে বালিয়াড়ির নীচে

শুয়ে আছে চুপচাপ--

তার স্তব্দতায় কেঁদেই চলেছে শূন্য কলসী

আর ধানখেত।


এখন উত্তাপ আর বৃষ্টিই শুধু দুজনকে ভাসাতে পারে-- 

মানুষের জন্য।

ঠিক কবিতা ঌ : পাভেল আমান

 


বর্ষা প্রেমিক  

পা ভে ল আ মা ন


বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটার

জলকণার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হবে 

এক অভিনব রং -

যা দিয়ে ক্যানভাসে ফুটে উঠবে

স্বপ্ন প্রেমিকার অবয়ব 

সে শুধু সুদীর্ঘকাল চাতকের ন্যায় 

প্রেমিকের আগমনের বার্তায়

অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষারত-

মাঝে মাঝে মননে বাসনা জাগে 

রক্ত মাংস দিয়ে প্রাণসঞ্চার ঘটিয়ে 

তাকে বাস্তবের যোগ্যা রূপে প্রাপ্ত হয় 

তাহলে কি মিরাক্যালই না ঘটবে? 

যেখানে কল্পনা ও বাস্তবের 

অদ্ভুত সহবস্থানে সৃষ্টি হবে 

অহর্নিশ নীরা' র চরিত্র 

এ যেন এক নিমেষেই রূপকথার 

পরিদের মর্তে আগমন 

বেঁচে থাকুক প্রাণের বর্ষা 

বেঁচে থাকো আমার স্বপ্ন প্রেমিকা।

ঠিক কবিতা ঌ : অনসূয়া দত্ত



জীবনের দরজায় 

অ ন সূ য়া দ ত্ত

মরীচিকা মরীচিকা সবই মরীচিকা
জীবনটাই মিথ্যা, জটিলতার আবরণে ঢাকা
চিল শকুনের খাবার; ওরা খুঁটে খুঁটে শেষ
করে লাল রঙা মাংস আর খুঁজে চলে
আরো আরো গলা পচা অবয়ব।

আসলে পা বাড়ালেই খাদ
তবে
মন খোঁজে আমৃত্যু সবুজ গালিচা যার
শরীর জুড়ে শুধু আরামের বাহানা
আর
চোখে রোদ চশমার আঁধারিয়া ঠান্ডা।

তাই জীবন জোড়া শুধুই মরীচিকার আসা যাওয়া।

Friday, January 1, 2021

ঠিক কবিতা ঌ : চতুর্থ সংখ্যা

 



সম্পাদকীয়


●সূচিপত্র●


অনিন্দ্য পাল


আশীষ মাহাত


রণ্দীপা সরকার


প্রনব রুদ্র


সৌমেন দেবনাথ


অমিত পাটোয়ারি


গোবিন্দ মোদক


জিল্লুর রহমান


রতন বসাক

ঠিক কবিতা ঌ : সম্পাদকীয়




সম্পাদকীয়

আমাদের অতীত চলে গ্যাছে
আমাদের বর্তমান ভাসছে
                                     জলে
ভবিষ্যতের সন্ধানে এখনও আমরা

ফুল ফুটুক হৃদিকমলে

~পিন্টু মুকুল
সম্পাদক
ঠিক কবিতা নয় 



●(চিত্র ঋণ : সৌমিতা মন্ডল )