✍️রবীন বসু
কবি ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য-এর কবিতার বই “কুয়াশা কুয়াশা কথা” গতকাল যাদবপুর কফিহাউসে হাতে পেলাম। শোভন সুন্দর ঝকঝকে একটি কাব্যগ্রন্থ। নামকরণেই মুগ্ধ হয়েছি প্রথমে। তারপর রুচিশীল প্রচ্ছদ নজর কেড়েছে। “কুয়াশা কুয়াশা কথা” কবির এক ভাসমান বোধ ও জীবন দর্শনের কবিতাগুচ্ছ। আপাত সরল নিরাভরণ দেহের কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে এক অনাবার্য টান ও বিস্ময়। সে বিস্ময় শুধু পাঠকের না, কবির নিজেরও বোধহয়।
“কিছু দেখেও দেখতে পাচ্ছি না
কিছু শুনেও শুনতে পাচ্ছি না
কিছু লিখেও লিখতে পারছি না।”
( পরমক্ষণিক )
আমরা এক অনিকেত শূন্যতায় ঝুলছি। সময় নির্মম ভাবে প্রতিশোধ নেয়, আর এটাই আধুনিক যুগ-যন্ত্রণা। কবি সেই যন্ত্রণার শিকার। সেই অবরুদ্ধ দিনের প্রতীকি ভাষা।
“যেন সূর্যের মধ্য আকাশ
যেন সব হারানো এক ভেকধারী ফকির
তাই অসফলের দরজায় কড়া নাড়ি।”
( অসফল আলো )
সে অর্থে এই যুগটাই অসফল। জীবন যেন না -পাওয়ার, স্বপ্নহীনতার এক খসে পড়া পালক। কবি কিন্তু যত্নে সেই পালক কুড়িয়ে বুক পকেটে রাখেন। কেননা, এটা তাঁর স্মৃতি। তাঁর বসবাস।
“ভাঙা চালের ভেতর দিয়ে আসা মায়া
যেন চাঁদের আলোর মতো স্নিগ্ধ।
সেখানেই বসবাস রাখি।”
( অসফল আলো )
কবি ইন্দ্রনীল তাঁর টুকরো টুকরো ক্ষণ, গভীর অনুভব আর নিজস্ব আর্তি বাঙ্ময় করেছেন শব্দের ম্যাজিক কুহকে। কবিতার শরীরে তাই সচেতন ভাবে না হলেও অপ্রত্যক্ষে তিনি পরাবাস্তবতাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। আর এতে কবিতায় একটা মায়া সৃষ্টি হয়। তার রেশ পাঠের পরেও থেকে যায়। আর এখানেই কবির সিদ্ধি।
“আবার এমন কুয়াশা আছে
যেখানে শুধুই ধ্বনিহীন প্রতিধ্বনি।
অর্ধেক জীবন পার করে এসে, সেই দৃষ্টিহীন
মূক ও বধির কুয়াশাটুকুই অবশিষ্ট পড়ে থাকে।”
( কুয়াশা কুয়াশা কথা )
আগেই বলেছি, কবির নিজস্ব এক দর্শন আছে। এ দর্শন দেখার না, উপলব্ধির। কবি তার অনুভব ও উপলব্ধিতে যে রাগিনী বাজিয়েছেন, সেখানে মুহূর্ত প্রতিভাত হয়েছে অনন্তে।
“দহনের ভেতর লুকিয়ে থাকে
অম্লান মেঘ, ঝরায় অবিরত।”
( অস্পষ্টতা )
✍️ রবীন বসু
____________________________________
কুয়াশা কুয়াশা কথা
ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য
সুতরাং প্রকাশনী
সঞ্জয় ঋষি
হাবড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা।
মূল্য - ১৫০/-
No comments:
Post a Comment